Sunday 13 September 2015

‘জান্নাতের দরজা’ খোলার অপেক্ষায় সাকলাইন আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম Published: 2015-09-12 17:01:21.0 BdST Updated: 2015-09-12 17:01:21.0 BdST Previous Next ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের পারফরমার সাকলাইন সজীব। কিন্তু নিয়মিত পারফর্ম করেও এখনও সুযোগ পাননি জাতীয় দলে। এবার বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে যাচ্ছেন ভারত সফরে। লক্ষ্য সফরে ভালো করে জাতীয় দলে ঢোকা। বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইনের নিজের ভাষায় যেটি জান্নাতের দরজা! Print Friendly and PDF 0 1 2985 সফর ভারতে, দৃষ্টি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ভারত সফরের জন্য বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ১৫ জনের স্কোয়াডের ১৪ জনেরই আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা। যে একজনের নেই, তিনিই সাকলাইন। আক্ষেপের দুয়ার বন্ধ করে সাকলাইন খুলতে চান স্বপ্নের দুয়ার। শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই বাঁহাতি স্পিনার জানালেন, সেই আশা আর প্রতিজ্ঞা নিয়েই বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে সোমবার উড়াল দেবেন ভারতে। “প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই দলে সুযোগ পাওয়া। সুযোগ পেলে যতটা ভালো সম্ভব পারফর্ম করা। যদি বলি অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ভাবনায় নেই, তাহলে মিথ্যে বলা হবে। অবশ্যই টেস্ট খেলতে চাই। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হলে এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না। ভারতে ভালো করলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।” ভারতের ব্যাটসম্যানরা স্পিন খেলায় দক্ষ, তাদের বিপক্ষে ভালো করা কঠিন। তবে চ্যালেঞ্জটা কঠিন বলে সাকলাইনের অনুপ্রেরণাও বেশি। “জানি ভারতে ভালো করা কঠিন। ওরা খেলাচ্ছেও অনেক শক্তিশালী দল। ওদের বিপক্ষে ভালো করতে পারলে তাই সেই পারফরম্যান্স গোনায় ধরা হবে বেশি। আমি নিজেকে উজার করে দেব।” জান্নাতের দরজা কুইজের ভালো প্রশ্ন হতে পারে এটি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বোলিং কার? কিংবা আরেকটি হতে পারে, প্রায় তিনশ’ প্রথম শ্রেণির উইকেট নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেননি বাংলাদেশের কোন বোলার? দুটির উত্তর একই, সাকলাইন! ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই পারফর্ম করেন। রাজশাহী হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৭ সালে। সেবার একটিই মাচই খেলেন। পরের মৌসুমেই নেন ৩১ উইকেট। সেই থেকে চোট বাদ দিলে প্রায় প্রতি মৌসুমেই ছড়িয়েছেন আলো। জাতীয় দলের দুয়ারে কড়া নেড়েছেন অনেকবারই। কিন্তু সেই দুয়ার খোলেনি কখনও! ৬৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে উইকেট তার এখন ২৮১টি। ৫৮ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে উইকেট ৭১টি। এত উইকেট নেওয়ার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ না পাওয়া বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় বিস্ময়কর বললেও কম বলা হয়। নিজের দূর্ভাগ্যে সাকলাইন হাসেন। সান্ত্বনাও খুঁজে নিয়েছেন ক্রিকেটের আলোচিত আরেকটি উদাহরণ থেকে। “ওয়াসিম-ওয়াকার ছিল বলে আকিব জাভেদের মতো বোলার বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। আমারও তেমনটাই হয়েছে। আমি যখন লিগে খেলা শুরু করি, তখনও রফিক ভাইরা খেলছেন। আমি যখন জাতীয় লিগে পারফর্ম করছি, তখন সাকিব-রাজ্জাক ভাইরা খেলছেন। পরে ইলিয়াস সানি, সোহাগ গাজী, তাইজুল ইসলামরা পারফর্ম করেই ঢুকেছে দলে। মাঝেমধ্যে আমার চোটও ছিল। সব মিলিয়ে মেনে নিয়েছি যে আমার ভাগ্য খারাপ ছিল।” দুর্ভাগ্যের কালো থাবা ছিল, তবে সবসময়ই নয়। কখনও কখনও ছিল উপেক্ষার যন্ত্রণাও। তাকে টপকে টেস্ট খেলে ফেললেন ইলিয়াস, সোহাগ, তাইজুল কিংবা হালের জুবায়ের হোসেন। এদের সঙ্গী হতেই পারতেন সাকলাইন! বুকে মোচড় দেওয়া প্রশ্নে আবারও মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলেন সাকলাইন, “আমি এখন মেনে নিয়েছি, এত সহজে হচ্ছে না। জাতীয় দল আমার কাছে জান্নাত। আর জান্নাতের দরজা তো সহজে খোলা যাবে না। অনেক কষ্ট করতে হবে। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশায় আছি একদিন জান্নাতের দরজা খুলবে আমার জন্য!” সবশেষ মৌসুমেই ৫২ উইকেট পেয়েছিলেন সাকলাইন। মৌসুমের উইকেটের অর্ধশতক করেছেন আগেও দুবার; ২০০৯-১০ মৌসুমে ৫৪ উইকেট, ২০১১-১২ মৌসুমে ৫০ উইকেট। ২০১২-১৩ মৌসুমেও ছিল ৪১ উইকেট। ঠিক এক বছর আগে, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই গড়েছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে কক্সবাজারে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন ৮২ রানে! ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন আরও ৬ উইকেট। ৬ উইকেট পেয়েছিলেন পরের ম্যাচেও। পরের মাসেই বাংলাদেশ সফরে এসেছিল জিম্বাবুয়ের মূল দল। ওই ‘এ’ দলের অনেকেই ছিলেন জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলে। তখন বলাবলি হচ্ছিল, সাকলাইনের টেস্ট দলে ডাক পাওয়া সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ২ ম্যাচে ২১ উইকেট নেওয়া পরও ভাগ্যের শিকে ছেড়েনি। ডাক পাননি সাকলাইন। এমন হতাশায় অনেকেরই মুষড়ে পড়ার কথা। কিন্তু সাকলাইনের কণ্ঠে তবু হতাশার কথা নেই, “তাইজুলও আসলে তখন পারফর্ম করছিল। সবাই তো আর একসঙ্গে সুযোগ পাবে না। তাইজুল ভালো খেলেই সুযোগ পেয়েছিল।” তবু হাল ছাড়া নয় বারবার উপেক্ষাতেও ভেঙে পড়ছেন না। বরং নির্বাচকদের ওপর সাকলাইনের অগাধ আস্থা। “নির্বাচকরা আসলে আমার সঙ্গে অনেকবারই কথা বলেছেন। বুঝিয়ে বলেছেন যে তারা আমার পারফরম্যান্স দেখছেন, দলে নিতে চান। কিন্তু সেই জায়গাটা হচ্ছে না। আমিও সেটা বুঝি। এজন্যই পারফর্ম করে যাচ্ছি, জায়গা হলে যেন প্রস্তুত থাকি।” জন্ডিসে আক্রান্ত তাইজুল আপাতত আছেন বিশ্রামে। আর টেস্ট ক্যাপের স্বপ্ন বুকে নিয়ে সাকলাইন যাচ্ছেন ভারতে। আরও একবার সময়, কিছু করে দেখানোর! কিন্তু এবারও ভালো করার পর যদি ডাক না আসে টেস্ট দলে? ২৬ বছর বয়সী সদাহাস্য স্পিনার আবার হাসেন। যে হাসিতে মিশে থাকল প্রত্যয়। “ডাক না পেলে নাই। জাতীয় লিগ আছে, বিসিএল আছে। আমার কাজ আমি করে যাব। হতাশ হলে তো কতবারই হতে পারতাম। ভেঙে পড়লে নিজেরই ক্ষতি। আমি চেষ্টা করে যাব। জান্নাতের দরজা একদিন খুলবেই…!”

‘জান্নাতের দরজা’ খোলার অপেক্ষায় সাকলাইন


No comments: